ভিসি শরফুদ্দিন আহমেদের বিদায়ের আগে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ড. তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৮ মার্চ। ইতিমধ্যেই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক।
শরফুদ্দিন আহমেদ দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন পদে স্বজনদের নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত তিন বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম না মেনেই বিভিন্ন পদে অ্যাডহক (চুক্তিভিত্তিক) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। শেষ পর্যন্ত, তিনি তাদের চাকরি স্থায়ী করার জন্য পদক্ষেপ নেন।
অভিযোগ, তিনি একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়োগ ও পদোন্নতির কাজ করেন। সিন্ডিকেটে রয়েছেন কয়েকজন চিকিৎসক ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন একদল চিকিৎসক।
তিনি ভিসি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়োগ ও পদোন্নতি বাণিজ্য শুরু করেন বলে অভিযোগ চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের। তিনি কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করেন না বলে অভিযোগ।
এদিকে নিয়োগ ইস্যুকে কেন্দ্র করে গত দুই দিনে দুই গ্রুপের চিকিৎসক-নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে সংঘর্ষ ও মারামারি হয়। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন চিকিৎসক। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গতকাল শনিবার একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তারা ভিসিকে ঘেরাও করে বলেন, নতুন ভিসি নিয়োগ করা হয়েছে। আপনি শুধু রুটিন ওয়ার্ক করবেন। ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে গতকাল একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ও নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আন্দোলনরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও নার্সদের অভিযোগ, কয়েকদিন ধরে ভিসিরা শত কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যকে বৈধতা দিতে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সভা করছেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে চিকিৎসক-নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ ও আন্দোলন শুরু করেন।
নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়ে আপত্তি জানাতে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও স্বাচিপ নেতারা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমান সরকারের আমলে কোনো উপাচার্যের মেয়াদে এ ধরনের পদোন্নতি ও নিয়োগ দেখা যায়নি। যদিও বিএনপির আমলে একজন ভিসির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠে।
নতুন ভিসি নিয়োগ পাওয়ায় বর্তমান ভিসির এখন রুটিন ওয়ার্ক করার কথা। কিন্তু শরফুদ্দিন আহমেদ বিদায়ের আগেই একটি দুর্নীতি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বড় ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। এর আগে ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রফেসর ড. কাদরী, অধ্যাপক ড.নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা.মাহমুদ হাসান। তারা তাদের দায়িত্ব সুনামের সাথে পালন করেছে। প্রফেসর ড. প্রাণ গোপাল দত্তের ভিসি থাকাকালে বিএসএমএমইউর বেশিরভাগ উন্নয়ন হয়েছে। এরপর আসেন প্রফেসর ড.কামরুল হাসান, প্রফেসর ড.কনক কান্তি বড়ুয়াও সুনাম অটুট রেখে কাজ করেছেন।
কিন্তু বর্তমান ভিসি সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখেছেন। তার দুর্নীতির গল্প বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবার মুখে মুখে।
তিনি 1000 শয্যার সাব-স্পেশালাইজড হাসপাতালটি পুরোপুরি খুলতে পারেননি। তার আমলে ডাক্তারদের মধ্যে দলাদলি মারাত্মক আকার ধারণ করে। চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালনের চেয়ে দলাদলি নিয়ে বেশি ব্যস্ত ছিলেন। চিকিৎসা সেবার মান একেবারে নিচের দিকে। সম্প্রতি মারা যাওয়া আপিল বিভাগের বিচারপতির পরিবার হাসপাতালে এসে চিকিৎসা না করার অভিযোগ করেছে। পরিবারের দাবি, চিকিৎসার অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে।
বর্তমান ভিসির বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়। তার অনেক আত্মীয় নিয়োগ করেছেন। এছাড়া তিনি প্রতি নিয়োগে ২০ লাখ থেকে ৫০ লাখের ব্যবসা করেন। সর্বশেষ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন সময়ে অ্যাডহক নিয়োগপ্রাপ্তদের স্থায়ী করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে মোটা অংকের টাকা।
অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম না মেনে গত তিন বছরে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন পদে প্রায় দুই হাজার লোককে অ্যাডহক (চুক্তিভিত্তিক) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শরফুদ্দিন আহমেদ আবারও নিয়ম ভাঙছেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতারা এ অভিযোগ তোলেন। তাদের দাবি, বর্তমান উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ীকরণ কমিটির মতামত না নিয়ে হুট করে স্থায়ীকরণের জন্য ভাইভা নিতে যাচ্ছিলেন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এর আগে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বিএসএমএমইউর বর্তমান ভিসির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব-উল-আলম হানিফ।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা.হাফিজুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।