পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুপারশপের পর কাঁচাবাজারেও পলিথিন ও পলিপ্রোপিলিনের তৈরি ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করা হবে।

তিনি বলেন, আগামী ১ অক্টোবর থেকে রাজধানীর সব সুপারশপে এবং ১ নভেম্বর থেকে সব কাঁচাবাজারে এই পদক্ষেপ কার্যকর হবে।

এছাড়া পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে ১ নভেম্বর থেকে অভিযান চালানোর হুঁশিয়ারিও দেন পরিবেশবাদী।আজ মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজার বণিক সমিতির কার্যালয়ে আলোচনা সভায় তিনি এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান। পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে বৈঠক।
এর আগে পলিথিন শপিং ব্যাগ, পলিথিন বা পলিপ্রোপিলিন পণ্যের ওপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে টাউন হল কাঁচাবাজারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের উদ্বোধন এবং বাজারে পলিথিনের বিকল্প বিতরণ, বিন স্থাপন ও স্থায়ী নোটিশ প্রদান করা হয়। বাজারে পলিথিন ব্যাগ এবং অন্যান্য পলিথিন প্যাকেজিং সংগ্রহের জন্য বোর্ড। পরিবেশ উপদেষ্টা।

মতবিনিময় সভায় পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, কাঁচাবাজারে যাতে আর পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার না হয় সেজন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আবার নিষেধ করার কিছু নেই। এটি 2002 সাল থেকে আইন দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার 2004-2006 সাল পর্যন্ত সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। পলিথিন উৎপাদনকারী বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু বাজারে কখনো অভিযান চালানো হয়নি। ফলে বাজারগুলো অন্যান্য স্থানে পলিথিন এনে পলিথিনে পণ্য সরবরাহ করে।

তিনি আরও বলেন, পলিথিন ব্যাগ রিসাইকেল করা গেলেও তা সন্তোষজনক নয়। কারণ পলিথিন ব্যাগ বা অন্যান্য উপকরণ থেকে মানুষের রক্ত। পলিথিন মস্তিষ্ক, যকৃতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে পলিথিন দিয়ে মোড়ানোর কারণে লবণের মধ্যেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যায়। আমাদের অনেক নদীতে মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যায়। তাই প্লাস্টিক ব্যবহার ক্ষতিকর বিষয়। তাই এটি সংগ্রহ করা এবং পুনর্ব্যবহার করাই শেষ উপায়, যেখানে অন্য কোন বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, ১ অক্টোবর থেকে ঢাকার সুপারশপে প্লাস্টিক ও পলিপ্রোপিলিন ব্যাগ আর ব্যবহার করা হবে না। এটা সরকারের একক সিদ্ধান্ত নয়। সুপারশপের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিকল্প হিসেবে পাট, কাপড় ও কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশ পাটকল সমিতিসহ ২০-২৫টি প্রতিষ্ঠান তাদের পাট, কাপড় ও কাগজের ব্যাগ সরবরাহ করবে। এরই মধ্যে সুপারশপগুলো তাদের দাবি জানিয়েছে এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাগ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, সুপারশপের পাশাপাশি আগামী ১ নভেম্বর কাঁচাবাজারে পলিথিন ও পলিপ্রোপিলিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে কার্যক্রম শুরু করব।আজকের মতো আলোচনা নয়, আইনের প্রয়োগ হবে। দোকানদার সমিতির নেতারাও আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে এক মাসের মধ্যে তারা পলিথিনের পরিবর্তে পাট, কাপড় বা কাগজের ব্যাগ ব্যবহার শুরু করবেন।

তিনি আরও বলেন, পলিথিন বা পলিপ্রোপিলিন ব্যাগ ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে আগামী ১ অক্টোবর সুপারশপ এবং ১ নভেম্বর কাঁচাবাজারে কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। একইসঙ্গে পলিথিন উৎপাদন হয় এমন জায়গায় আগামী ১ নভেম্বর থেকে আমাদের প্রচারণা শুরু হবে। সবাই পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছে। আমরা বিকল্প প্রদানের জন্যও কাজ করছি।

আমরা অভিযান চালিয়ে তিক্ত পরিস্থিতি মোকাবেলা শুরু করতে চাই না। পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার ক্ষতিকর তা সবারই বোঝা উচিত। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এই বিষয়ে আমাদের সতর্ক, সচেতন এবং সক্রিয় হওয়ার এখন অতীত। আমরা বেশ দেরিতে শুরু করেছি। আমরা আইন প্রণয়ন এবং আইন প্রয়োগ করিনি, যোগ করেন উপদেষ্টা।

এ সময় মোহাম্মদপুর টাউন হল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন রাওয়ালপিন্ডি বণিক সমিতির সভাপতি মোঃ লুৎফুর রহমান (বাবুল), পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

Shares:
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *