স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রতিনিয়ত ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে (রিপাবলিক অব বেঙ্গল) যে মন্তব্য করা হয়েছে তার প্রতিবাদ জানাবে সরকার।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সের ড্রিল শেডে বরিশাল বিভাগের আইনশৃঙ্খলা সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় বরিশালে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। মাঝে মাঝে সড়ক অবরোধ করলেও তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করতে হবে সবার। এবং সর্বোত্তম উপায় হল রাস্তা ব্লক না করে সঠিক চ্যানেলে দাবি স্থাপন করা। আমার সাথে এখানে ছাত্র প্রতিনিধি আছে, যাদের আমি সাহায্য করতে বলেছি। রাস্তা অবরোধ করে যাতে জনগণকে সমস্যায় না ফেলা হয় সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, আমাদের বাহিনীকে জনবান্ধব করতে হবে। জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা নিয়ে এখানে (বিনিময় সভায়) আলোচনা হয়েছে। আমাদের বাহিনীতেও অনেক সমস্যা আছে যেমন- যানবাহন, টাকা-পয়সা ইত্যাদি বিভিন্ন লজিস্টিক সমস্যা আছে, কীভাবে সেগুলোর উন্নতি করা যায়, কীভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা যায় সে বিষয়েও আলোচনা হয়।
12 নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তথাকথিত গণমাধ্যম ‘রিপাবলিক বাংলা’ ইউটিউব চ্যানেলে ‘চট্টগ্রাম কি আলাদা রাজ্য হবে? মাউন্টব্যাটেন- নেহরুর ভুল শুধরানোর সময়? ভারতের হস্তক্ষেপ প্রয়োজনীয়?’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন যেখানে উপস্থাপক ময়ূখ রঞ্জন ঘোষকে খুব উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘চট্টগ্রাম কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর-পূর্ব ভারত সংলগ্ন আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, চট্টগ্রাম। উত্তর-পূর্ব ভারতে বর্তমানে কোনো সমুদ্রপথ নেই। আসাম বা ত্রিপুরায় ভারতীয় পণ্য পরিবহনে অনেক টাকা খরচ হয়। এসব পণ্যকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। তাই চট্টগ্রাম ভারত হয়ে গেলে এই পথ অনেকটাই কমে যাবে। ‘
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হবে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবাদের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে। কারণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অন্য দেশে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ পাঠায়। এ ক্ষেত্রে তাদের (ভারতকে) জোরালো প্রতিবাদ পত্র দিতে বলা হবে।
তিনি বলেন, শুধু এই একটি বিষয় নয়- ভারতীয় গণমাধ্যম প্রতিদিন আমাদের সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে, এ ব্যাপারে আপনাদের সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। তারা প্রতিদিন মিথ্যা রিপোর্ট দিচ্ছে, তারা যাতে মিথ্যা রিপোর্ট না দেয়, আমি আপনার সাহায্য চাই।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, আপনারা সত্যিকারের প্রতিবেদন দেন, আমাদের কোনো ভুল হলে আপনারা বলেন, আমরা সংশোধন করব। আমার মধ্যে কোনো দুর্নীতি থাকলে বলুন, আমি উত্তর দিতে দ্বিধা করি না। তবে মিথ্যা রিপোর্ট দেবেন না, কারণ মিথ্যা বিষয়টি এক সময় প্রকাশ পাবে।
ভারতীয়দের মিথ্যা রিপোর্ট ছড়ানোর কথা এখন সবাই জানে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এখন পরিস্থিতি এমন, সত্য রিপোর্ট করলে সবাই বলবে মিথ্যা রিপোর্ট। আপনি মিডিয়ার মাধ্যমে এর প্রতিবাদ করেন, এবং আপনি এই ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।
এ সময় পুলিশ প্রধান (আইজিপি) মইনুল ইসলাম, র্যাবের মহাপরিচালক একেএম শহীদুর রহমান, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো রায়হান কাওছার, বরিশাল সেনানিবাসের ৭ পদাতিক ডিভিশনের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল আজিম উপস্থিত ছিলেন।