চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, এর আগে যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছিল, তাদের মধ্যে কতজন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীনে পরীক্ষা দিয়েছিল? কতজন পাশ করেছে? সেই হিসাব বের করতে হবে। তারা ঢাকা পরীক্ষায় বেশি পাশ করেছে, তারা আগে প্রমাণ করুক মেয়েরা বেশি পাশ করে বেশি চাকরি পেয়েছে কি না।
রোববার (৭ জুলাই) গণভবনে যুব মহিলা লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। যুব মহিলা লীগের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার (৬ জুলাই) আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করেন সংগঠনটির নেতারা।
কোটা বিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কোটা আন্দোলন দেখেছি! আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিল করতে হবে, নারী কোটা বাতিল করতে হবে, ইত্যাদি একবার বাতিল হয়েছিল।’
কোটা বাতিলের ফলাফল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মতে, পরীক্ষার আগে যেখানে কোটা ছিল, মেয়েরা যে পরিমাণ সুযোগ পেয়েছিল, গতবার সে পরিমাণ সুযোগ পায়নি। কয়েক বছর। এটাই বাস্তবতা। এমনকি অনেক জেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ বঞ্চিত রয়ে গেছে। তারাও চাকরি পাচ্ছেন না।
বঞ্চনার কারণে এ মামলার সত্যতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। আমরা সব সময় হাইকোর্টের রায় মেনে নিই। আমরা দেখেছি এখন আবার কোটা বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। শিক্ষার পাশাপাশি কোটা বিরোধী আন্দোলন, মেয়েরাও করছে!
সরকারপ্রধান বলেন, “হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এ ধরনের আন্দোলন… এটি একটি বিচারাধীন বিষয়।” সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কথা বলতে পারি না। উচ্চ আদালত রায় দিলে সেখান থেকে আসা উচিত। কিন্তু আন্দোলনের নামে পড়ালেখার সময় নষ্ট করার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না।
সবার জন্য সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প প্রবর্তনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে (2008 সালের নির্বাচন) ছিল। শুধুমাত্র সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পান, বাকিরা বঞ্চিত। বিভিন্ন স্তরে সার্বজনীন পেনশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে কেউ যাতে না পড়ে৷ বঞ্চিত করা হয়।
যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুব মহিলা লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মী তাদের ভবিষ্যতের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিমে যোগ দিতে পারেন। মানুষ যখন বৃদ্ধ হয়ে যায়, কাজ করতে অক্ষম হয়, তখন আয়ের নিশ্চিত সুযোগ থাকে। আছে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ। যারা সর্বনিম্ন স্তরে আছেন তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি। যদি তারা ৫০০ টাকা রাখে, তাহলে সরকার থেকে আরও ৫০০ টাকা দিয়ে তাদেরও ভালো পেনশন পাওয়া উচিত এবং সারাজীবনের জন্য পাওয়া উচিত।’
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের রাজনীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সার্বজনীন পেনশন স্কিমে প্রবেশ করা দরকার। তাহলে অন্তত প্রাণের নিশ্চয়তা থাকবে। বার্ধক্যে কাউকে অপেক্ষা করতে হয় না। ছেলের ঘাড়ে ভার হবে না, মেয়ের ঘাড়ে বোঝা হবে না। নিজে খেতে পারেন।
নারীরা সমাজের অর্ধেক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের পিছিয়ে রাখলে সমাজ কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না, দেশ এগিয়ে যেতে পারবে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই কথা বলতেন।
তিনি বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগ নিয়ে আরও বলেন, তিনি মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করেছেন, সংসদে মেয়েদের আসনের আলাদা কোটা দিয়েছেন। চাকরির ক্ষেত্রে (মুক্তিযুদ্ধে) নির্যাতিত মেয়ে ও নারীদের জন্য আলাদা ১০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যাতে নারীরা তাদের যথাযথ স্থান নিতে পারে। নারীরা যদি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে এবং তাদের মেধাকে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিকাশের সুযোগ দেওয়া যায় তাহলে দেশের উন্নতি হবে।
এ সময় যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজি, সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলিসহ কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।